দীর্ঘ ২৯ বছর পর জনপ্রিয় অভিনেতা সালমান শাহর অপমৃত্যুর মামলা এখন হত্যা মামলায় রূপ নিয়েছে। এ ঘটনায় নতুন করে আলোচনায় এসেছে ১৯৯৭ সালে রেজভী আহমেদ ফরহাদের দেয়া একটি জবানবন্দি, যেখানে তিনি সালমান শাহ হত্যার দায় স্বীকার করেছিলেন।

১৯৯৭ সালের ১৬৪ ধারার সেই জবানবন্দিতে রেজভী বলেন, “আমরা সালমান শাহকে হত্যা করেছি। ঘটনাটিকে আত্মহত্যা হিসেবে সাজানো হয়েছিল। এ হত্যাকাণ্ডে সামিরা ও তার পরিবারের সদস্যসহ আরও অনেকে জড়িত ছিলেন। আমিও হত্যার সময় উপস্থিত ছিলাম।”

রেজভীর দাবি অনুযায়ী, সালমান শাহর মৃত্যু ছিল ১২ লাখ টাকার বিনিময়ে সংঘটিত এক পরিকল্পিত হত্যা। এই চুক্তির মূল উদ্যোক্তা ছিলেন সালমান শাহর শাশুড়ি লতিফা হক লুসি। হত্যার পরিকল্পনায় আরও যুক্ত ছিলেন চলচ্চিত্রের খলনায়ক ডন, ডেভিড, ফারুক ও জাভেদ।

তিনি জানান, ১৯৯৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর গুলিস্তানের একটি বারে রাতে ডন, ডেভিড, ফারুক, জাভেদ, ছাত্তার ও সাজু নামে আরও দুজনের সঙ্গে বৈঠক হয়। ফারুক সেখানেই জানান, সামিরার মা প্রথমে ২ লাখ টাকা দিয়েছেন, পরে পুরো কাজের জন্য ১২ লাখ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্লাস্টিকের দড়ি, সিরিঞ্জ ও রিভলবারসহ হত্যার প্রস্তুতি নেওয়া হয়।

রেজভীর ভয়াবহ বর্ণনা অনুযায়ী, সেদিন রাত আড়াইটার দিকে সালমান শাহর বাসায় যান ডন, ডেভিড, ফারুক ও আজিজ মোহাম্মদ ভাই। ঘুমন্ত অবস্থায় সালমানকে ক্লোরোফর্ম দিয়ে অচেতন করা হয়। কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরে এলে শুরু হয় ধস্তাধস্তি। এরপর সালমানের শরীরে ইনজেকশন পুশ করার নির্দেশ দেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই। সালমান শাহকে হত্যা করার পর তার লাশ সিলিং ফ্যানে ঝুলিয়ে আত্মহত্যা হিসেবে সাজানো হয়।

এই হত্যাকাণ্ডে উপস্থিত ছিলেন সালমান শাহর স্ত্রী সামিরা, তার মা লতিফা হক লুসি ও আত্মীয়া রুবি।

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মাত্র ২৫ বছর বয়সে রহস্যজনকভাবে মৃত্যুবরণ করেন ঢালিউড সুপারস্টার সালমান শাহ। এতদিন তার মৃত্যু অপমৃত্যু হিসেবে বিবেচিত হলেও, বিভিন্ন তদন্তেও প্রকৃত সত্য গোপন থাকায় অবশেষে মামলাটি হত্যা হিসেবে পুনর্গঠন করা হয়েছে।

হত্যা মামলায় মোট ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে। প্রধান আসামি সালমান শাহর সাবেক স্ত্রী সামিরা হক। অন্যান্য আসামিরা হলেন— প্রযোজক আজিজ মোহাম্মদ ভাই, খলনায়ক ডন, শাশুড়ি লতিফা হক লুসি, ডেভিড, জাভেদ, ফারুক, মেফিয়ার বিউটি সেন্টারের রুবি, আবদুস সাত্তার, সাজু ও রেজভী আহমেদ ফরহাদ।